Header Ads

মানুষ কেন আত্মহত্যা করে ?

 Susaid

মানুষ কেন আত্মহত্যা করে ? বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত এবং উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এটা। সহজ কথায় , যখন একজন মানুষ মনে করে  তার ব্যর্থতা বা কষ্ট বা অভিমান থেকে উত্তরণের আর কোনো বিকল্প পথ নেই  , সব শেষ হয়ে গেছে , তখন মানুষ সব কিছু থেকে মুক্তি পেতে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।  

জানতে চান আরও সাইকোলজিক্যাল ব্যখ্যা এবং উত্তরণের উপায় ? অসাধারণ লেখাটি ধৈর্য ধরে মনযোগ দিয়ে পড়ুন।

একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস সে নিজেই। কোন কষ্টের অভিঘাতে মানুষ সেই প্রিয়তাকে নির্বিকারভাবে খুন করে ফেলে? বছর বছর শারীরিকভাবে কষ্ট দিলেও মানুষ নিজেকে শেষ করার কথা ভাবে না। বরং মাকড়সার মত কোন এক ফাঁকে বেঁচে থাকার আশার জাল বুনতে থাকে। কিন্তু একটা ছোট্ট ঘটনা অনুভূতিকে বা উপলব্ধিকে কতটা সজোরে নাড়া দিলে একজন মানুষ নিজেকে শেষ করতে উদ্যত হয়?   মানুষ কেন আত্মঘাতী হয়,সাইকোলজির বিভিন্ন থিওরি বিভিন্নভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। “একজিস্টেনশিয়ালিজম” তেমনি একটি থিওরি। এই থিওরির আলোকেও মানুষের আত্মঘাতী হবার প্রয়াসকে ব্যাখ্যা করা যায়।

একজিস্টেনশিয়াল সাইকোলজিস্টরা মনে করেন,প্রতিটি মানুষের ভেতর ৪টি বেসিক আল্টিমেট কনসার্ন (এর সঠিক বাংলা করা যাচ্ছে না,তাই ইংলিশ শব্দগুলোই রেখে দেওয়া হল।) রয়েছে।
১। স্বাধীনতা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলতা
২। মৃত্যু
৩। একাকিত্ব
৪। অর্থহীনতা

প্রত্যেকটির সাথে এক ধরণের উদ্বেগ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। এই উদ্বেগ যখন একজন মানুষের শারীরিক,মানসিক,সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়, তখনই একজন মানুষ নাকাল হয়ে পড়ে।  শামুকের সাথে খোলসের যে সম্পর্ক আত্মহত্যার সাথে উপরোক্ত ৪টি কনসার্নই নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।  তবে আমার মনে হয় ৪টির ভেতর মানুষ সবচেয়ে বেশি যে কারণে আত্মহত্যা করে,সেটি হল অর্থহীনতা।  আত্মহত্যার সাথে অর্থহীনতার সম্পর্কটি একটু আলোচনা করা যাক।

 একেকজন মানুষের কাছে জীবনের অর্থ একেক সময়ে একেক রকম। আমি একজন প্রেমিক পুরুষ,প্রেমিকার জন্য সবকিছু করতে পারি। প্রেমিকাকে পাওয়াই আমার জীবনের একমাত্র চাওয়া। না পেলে জীবনের কোন মূল্য থাকে না। প্রেমিকা পেয়ে জীবনের মূল্য সে সময়ের জন্য চুকে গেলেও নতুন আরেকটি মূল্য মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। এবার একটি বাড়ি এবং গাড়ি না হলে আর চলছেই না! ধাপে ধাপে জীবনের অর্থ পরিবর্তন হচ্ছে। যে ধাপের আবেগকে বস্তুনিষ্ঠভাবে মোকাবিলা করতে পারি,সে ধাপে টিকে যাই। আর যে ধাপে পারি না,সেখানেই জীবনের পরাজয়।  

এইচএসসি’তে পাশ করতে না পারা একজন শিক্ষার্থীর কথা ভাবি। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে জীবনকে উপভোগ করবে,আজকে এই রেস্টুরেন্টে কালকে সেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বন্ধুবান্ধবীর সাথে সেলফি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করবে,বাবা-মা আত্মীয় মহলে সন্তানের স্তুতিবাক্য আওড়াবেন,সামনে সুন্দর একটি ভবিষ্যতের হাতছানি-ভালোবাসা,সংসার,সন্তান-সন্ততি,এবং অটুট নিশ্চয়তা,এমন একটি সুন্দর স্বপ্নের অপমৃত্যু জীবনকে আর কোন অর্থ দিতে পারে না। যদি ঘুরে দাঁড়িয়েও জীবনের অর্থকে নতুনভাবে ঝালাইও করা হয় তবুও পরাজয়ের গ্লানি,বাকি বন্ধুদের উল্লাস,পাড়া-প্রতিবেশীর সমালোচনা,পরিবারের কটুক্তিসহ বিভিন্ন ধরণের আশঙ্কা জীবনের অর্থকে সংকুচিত করে দেবে। বেঁচে থাকার কোন মানে খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং আত্মহত্যাই একমাত্র পথ। হেঁটেই দেখি সে পথে-যে পথ দিয়ে হেঁটেছেন অনেক অনেক রথি-মহারথি। রবিন উইলিয়ামস থেকে চেস্টার বেনিংটনও কি সে পথে হাঁটেননি?

সব বয়সের মানুষের জীবনে অর্থ থাকে। যে ঘটনা আমাদের জীবনের অর্থকে চ্যালেঞ্জ করে,সেখানেই আমরা কুপোকাত হয়ে যায়। পাখি ড্রেস না পাওয়া মেয়েটি ভাবছে,বাবা-মা আমাকে ভালবাসলে অবশ্যই কিনে দিত, এই পার্বণে আর বন্ধুমহলে আমার ঠাট ঠিকছে না,উপায় একমাত্র বেনিংটনদের দেখানো রাস্তা!

একজিস্টেনশিয়াল সাইকোথেরাপি এই রাস্তা থেকে বিরত থাকার উপায় বাতলে দিয়েছেন। আসুন দেখি সেগুলো কি কি।
১। জীবনকে আলিঙ্গন করতে শিখুন। ব্যর্থতাও জীবনের অংশ। এঁকে গ্রহণ করুন সাফল্যকে যেমন ভাবে গ্রহণ করেছেন বা করছেন।  ২। আপনার জীবনের সবকিছুর জন্য দায়িত্বশীল হোন-সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুটোর জন্যও।
৩। যত ধরণের ভয় আছে সেগুলোকে গ্রহণ করুন। এরপর জয় করার কৌশল বের করুন।
৪। কৌশল বের হলে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিন,মানুষের ইচ্ছাশক্তির কাছে কোন কিছুই বাঁধা নয়।
৫। জীবনের প্রতিটি ঘটনাকে একটি শিক্ষনীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখুন,শুধুমাত্র একটি ট্রায়াল বা সুযোগ হিসেবে নয়।
৬। অতীত বেশি বেশি না ঘেঁটে বর্তমানে থাকুন। বর্তমানে কি করতে পারেন তাই ভাবুন। ৭। জীবনকে উপভোগের অনেক রসদ আপনার চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেগুলোর সন্ধান করুন।  ৮। কোন একটি পরাজয়ে জীবনের অর্থ শেষ হয়ে যায় না। সময়ের সাথে সাথে নতুন সুযোগ এসে নতুন অর্থ তৈরি করে দেয়। এটি বিশ্বাস করুন।
৯। প্রাণ খুলে কথা বলুন। শেয়ার করুন বিশ্বস্ত মানুষদের সাথে।   সবার জীবন অর্থবহ হোক। মনের ভাঁজে ভাঁজে জমে থাকা গ্লানি কারো জীবন নাশের কারণ যেন না হয়ে দাঁড়ায় এই প্রার্থনা। ড্রিম সাইকোলজি সবসময় আপনার পাশে আছে-আপনার সাফল্যে আছে,থাকবে ব্যর্থতার দিনগুলোতেও।

No comments

Powered by Blogger.