Header Ads

স্বামী স্ত্রীর মিষ্টি ভালবাসার গল্প

স্বামী স্ত্রীর মিষ্টি ভালবাসা


বাসর ঘরে ঢুকতেই বউ আমাকে সালাম দিলো।আমিও সালামের উত্তর নিয়ে পাশে গিয়ে বসলাম।পাশে বসতেই বৌ আমাকে বলল....
----ঘড়িতে তাকিঁয়ে দেখুন তো কয়টা বাজে??
বাসর রাতে বৌয়ের এমন সাহসী প্রশ্নে কিছুটা বিচলিত হলাম।তখন ঘড়িতে তাকিঁয়ে দেখি রাত ১২.৩০মিঃ।আমি বৌয়ের পাশে বসে আস্তে করে বললাম.....
----শোনো আমার এখন বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই ছিলো না।আমার বাবা-মায়ের পছন্দেই তোমাকে বিয়ে করেছি।তবে আমার কারো সাথে কোন সম্পর্ক ও নেই। কিন্তু আমি বিয়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।তাই আমি এখন চাইলেও এত সহজে তোমাকে বউ হিসেবে মানতে বা বৌয়ের অধিকার দিতে পারবোনা।
কথা গুলো বলে শেষ করা মাত্র ই
নতুন বউ আমার পাঞ্জাবির কলারটা চেপে ধরে বলল.....
----আমাকে কি খেলার পুতুল মনে হয় নাকি??পছন্দ হয়নি, বিয়ে করতে চাননি এইটা আগে বলতে পারলেন না??
নিজের মায়ের মন রক্ষা করতে আমার সব আশা-স্বপ্ন কে কেন বলিদান দিতে হবে?
বিয়ে করার ইচ্ছে নেই,এইটা আমাকে আগে বললেই পারতেন।তবেই আমি আমার পক্ষ থেকে বিয়ে ভেঙে দিতাম।মায়ের প্রতি ভন্ড ভক্তি শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়ে আমার জীবনটা কেন এইভাবে নষ্ট করে দিলেন হুম?
আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি।এখন আমি যেভাবে বলব সেভাবেই সব হবে। ঠিক আছে????
বলেই কলার টা ছেড়ে দিলো।পরে আবার বলল....
----আচ্ছা যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
দিতে হবে না আপনাকে বউয়ের অধিকার।
যান নিচে গিয়ে ঘুমান।একদম খাটে ঘুমাতে পারবেন না।
বলেই আমার বালিশ পা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।আমি ও বাধ্য ছেলের মতো ফ্লোরেই শুয়ে পড়লাম।আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,কেমন গুন্ডি মেয়ে রে বাবা।জীবনেও এমন মেয়ে দেখিনী।
মনে তো হচ্ছে জীবন পুরাই তেজপাতা করে ছাড়বে।
.
ফ্লোরে ঘুমই আসছেনা।কখনই ফ্লোরে ঘুমাই নি।কিন্তু আজকে নিজের অমতে বিয়ে করার কারনেই ফ্লোরে ঘুমাতে হচ্ছে।
এর মধ্যে মশার আন্দোলন। ইসসসসসস,,,,,,সহ্য হচ্ছেনা।চোখ বন্ধ শুয়ে করে আছি।কখন জানি ঘুমটা লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি।হঠাৎই সজাগ হয়ে দেখি আমার শরীরে কম্বল আর পাশে ও মশার কয়েল লাগানো।মনটাতে একটু স্বস্তি পেলাম,চোর হলেও মানুষ ভালো।
মনে মায়াদয়া আছে।
.
পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই দেখি টেবিলে চা রাখা।চা খেয়ে,ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে ফোন টিপছিলাম তখন ই পাপিয়া(আমার বৌ)এসে বললো.....
----এইযে সেই কতক্ষন যাবত খাবার নিয়ে সবাই অপেক্ষা আর আপনি ঘরে বসে আছেন কেন?এখনি নিচে যাবেন নাকি......??বলেই আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো...
-----নাকি খাবার টা রুমে নিয়ে আসবো?
আমি তো হার্ট এ্যাটাক হতে হতে বেচেঁ গেছি।আমি তো ভাবছিলাম,বউ বুঝি এইবার ও কলার ধরেই আমাকে খাবার টেবিলে নিবে।কিন্তু না,বউয়ের স্বর পাল্টে গেছে,তবে কি বউ আমার প্রেমে পড়ে গেল নাকি??কথাটা ভাবতে ভাবতেই বউয়ের দিকে তাকালাম।হা হয়ে তাকিঁয়ে আছি,বউ তো আমার হেব্বি সুন্দরী। রাতে তো ভাবছিলাম হিটলারনি।এখন দেখি না মায়াময়ী। এইবার যে আমি বউয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।নিজেই নিজেকে বললাম...
----সজিব মনে হয় তুই তোর হিটলারনি বউয়ের প্রেমে পড়ে গেছিস।
.
হঠাৎ একটা বিকট শব্দে বাস্তবে ফিরলাম।
সামনে তাকিঁয়ে বউ আমার ফ্লোরে পরে চোখ বন্ধ করে আছে।বুঝতে পারলাম,পাগলীটা খুবই ব্যথা পাইছে।
দৌড়ে গিয়ে টেনে তুলে বসাতে গেলাম আর অমনি আস্তে করে বলল.....
----কেমন স্বামী গো আপনি??
আমি তো একটু ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে গেলাম।
বললাম...
----আমি আবার কি করলাম।
বৌ বলল....
----আমি মাটিতে পরে আছি কই কোলে করে নিয়ে বিছানায় শোয়াবেন,তা না করে আমার হাত ধরে টানছেন।
সাথে সাথেই আমি কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল....
----ইচ্ছে করে এইভাবে ই ধরে রাখি সারাটা জীবন।কিন্তু আপনি তো আমাকে পছন্দই করেন না।
কথা শেষ করেই পাপিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।আমারও বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল।খুব ইচ্ছে হচ্ছিল কপালে একটা চুমো একেঁ দিয়ে বললাম...
----পাগলী আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি গো।
কিন্তু পারলাম না।কোথায় জানি একটা বাধাঁ পাচ্ছিলাম।এই সুযোগে পাপিয়া আমাকে ঠেলে বিছানায় ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালালো।আমি শুধু ওর চলে যাওয়ার পানে তাকিঁয়ে রইলাম। পরক্ষনেই খেয়াল হলো,ও তো ব্যথা পাইছে।যার কারনে কোলে করে উঠাতে হলো।বুঝতে আর বাকি রইলো না,এইবার ও আমাকে বোকা বানানো হয়েছে।
.
পাগলিটার সাথে খুনসুটি প্রেম করতে করতেই কেটে গেল ২টা বছর।এখন কেউ কাউকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারিনা।
আমার পাগলীটা এখন গর্ভবতী।
তাই খুব যত্ন নেই তার।আজকেই বাচ্চা হবার তারিখ দিয়েছে ডাক্তার।
আমি অফিসে ছিলাম,হঠাৎই আব্বার ফোন পেয়ে ছুটে গেলাম হসপিটাল।গিয়েই শুনলাম আমার ঘর আলো করে এসেছে এক ছোট্ট রাজকন্যা।
কিন্তু....
আমার পাগলিটার কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছিনা কেন??ভয়ে আৎকে উঠলাম।অনেকের মুখেই শুনেছি,বাচ্চা জন্মদিতে গিয়ে মারা গেছে অনেক মা।সে ভয়েই বাচ্চা নিতে চাইনি।কিন্তু ওর নাকি বাচ্চা লাগবেই।
ওর ইচ্ছে পূরন করতে গিয়েই কি তবে......???
আর ভাবতেই পারছিনা।
আর একটা মিনিট ও নষ্ট না করে,দৌড়ে গেলাম কেবিনে।গিয়ে দেখি বাচ্চা টা হাত পা নাড়িয়ে খেলছে।
কিন্তু পাপিয়া চোখ বন্ধ করে রাখছে।
ওর নিঃশ্বাস আছে কি নাই তা দেখার মতো ধৈর্য আমার ছিলোনা।তাই পাপিয়াকে জড়িয়ে চিৎকার দিয়ে ফেললাম।
সাথে সাথেই কানের কাছে একটু ব্যথা অনুভব করলাম।পরে দেখি পাপিয়া আমার আস্তে করে কানে কামড় দিয়ে বলল....
-----কি ভাবছিলা তোমাকে একা রেখে চলে যাবো??আরে না গো,আমি চলে গেলে,তোমাকে জ্বালাবে কে??
আমিও বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম।আর বললাম,বড্ড ভালোবাসি রে পাগলি তোকে।ছাড়বোনা কখনই।

2 comments:

Powered by Blogger.